অনলাইন ডেস্ক
পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) থেকে দুই কোটি টাকা ঋণ পেতে ব্যাংকটির অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতীকে ৩৫ লাখ টাকা ‘ঘুষ দিয়েছিলেন’ রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, হাসপাতালের জন্য এমআরআই মেশিন কেনার জন্য ওই ঋণ নেওয়া হলেও তা না করে সেই অর্থ সাহেদ আত্মসাৎ করেছেন।
এই অভিযোগে বাবুল চিশতী ও সাহেদসহ চারজনকে আসামি করে সোমবার মামলা করেছে দুদক।
অপর দুই আসামি হলেন- বাবুল চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতী এবং রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইব্রাহিম খলিল।
এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি রিজেন্ট হাসপাতালের নামে পদ্মা ব্যাংকের গুলশান কর্পোরেট শাখায় একটি হিসাব খোলেন সাহেদ।
হাসপাতালের জন্য ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকায় একটি এমআরআই মেশিন কেনার কথা বলে হিসাব খোলার দিনই সাহেদ ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের কাছে ১ কোটি টাকার এফডিআর বন্ধক রেখে ২ কোটি টাকার ঋণের জন্য আবেদন করেন।
ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা না দেখে পরের দিন সাহেদের আবেদন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয় উল্লেখ করে মামলা বলা হয়, ওই বছরের ১৩ জানুয়ারি সাহেদের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে ২ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদনের জন্য ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান বাবুল চিশতীর কাছে উপস্থাপন করা হলে তিনি তা অনুমোদন করেন।
এরপর ১৯ জানুয়ারি এমআরআই মেশিন সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি টাকার পে অর্ডার ইস্যু করা হয়। ২১ জানুয়ারি শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা মহিলা শাখা থেকে সেই অর্থ তুলে নেওয়া হলেও তা দিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের জন্য কোনো এমআরআই মেশিন কেনা হয়নি বলে জানানো হয়েছে মামলার এজাহারে।
সেখানে বলা হয়, সাহেদ ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ করেননি। এফডিআরের এক কোটি টাকা সমন্বয়ের পর বাকি এক কোটি টাকা থেকে সুদ আসলসহ মোট দুই কোটি ৭১ লাখ টাকা এখন সাহেদের কাছে পাওনা রয়েছে ব্যাংকের।
দুদকের অনুসন্ধানের তথ্য তুলে ধরে এজাহারে বলা হয়, ওই ২ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুরের আগেই সাহেদ ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি পদ্মা ব্যাংকের বকশীগঞ্জ শাখায় বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ৩৫ লাখ টাকা জমা দেন। এই টাকা উত্তোলন করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাবুল চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতী।
বাবুল চিশতী, তার স্ত্রী রোজী চিশতী, মেয়ে রিমি চিশতী ও ছেলে রাশেদুল হক চিশতী বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের মালিক।
এজাহারে বলা হয়, “বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের সাথে রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবসায়ীক কোনো সম্পর্ক নেই। ঋণগ্রহীতার সাথে কোনো ব্যবসায়ীক সম্পর্ক না থাকার পরেও বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের নামে ওই ৩৫ লাখ টাকা গ্রহণ করায় প্রমাণ হয়, রাশেদুল হক চিশতী এই আর্থিক সুবিধা/উৎকোচ গ্রহণ করে তার পিতা মাহবুবুল হক চিশতীর মাধ্যমে রিজেন্ট হাসপাতালকে অবৈধভাবে ঋণ পাইয়ে দেন।”
এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে গত ২২ জুলাই এনআরবি ব্যাংকের এক কোটি ৫১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমসহ চারজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুদক।
আগের দিন ২১ জুলাই পদ্মা ব্যাংকের প্রায় ৬৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে বাবুল চিশতীসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা করে কমিশন।
অবৈধ সুবিধা নিয়ে ভুয়া দলিলপত্রের মাধ্যমে নামে-বেনামে ঋণ বিতরণসহ অন্যান্য মাধ্যমে পদ্মা ব্যাংকের শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাবুল চিশতীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আটটি মামলা করেছে দুদক।